নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
রহিম একদিন একটি বদ্ধ পাত্রে নিচের বিক্রিয়াটি করছিলঃ
এখানে বিক্রিয়ক ও উৎপাদ প্রত্যেকে গ্যাসীয়। রহিম খেয়াল করল বিক্রিয়াটি শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। সে জানত, তাপ দিলে বিক্রিয়ার বেগ বাড়ে।তাই সে বিক্রিয়াটির সম্মুখ বেগ বাড়ানোর জন্য তাপ দিতে লাগল।
ক. একক সময়ে একটি বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক ব্যবহারের পরিমাণকে কী বলে?
খ. প্রভাবককে বিক্রিয়ক বলা যায় না কেন?
গ. বিক্রিয়াটির বর্তমান অবস্থায় চাপ বাড়ালে এর গতিপ্রকৃতির কী হবে, ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তাপ দেওয়ার ফলে রহিমের ইচ্ছে মতো বিক্রিয়াটির সম্মুখ বেগ বাড়বে কিনা, তা যাচাই করো।
নমুনা উত্তরঃ
ক. একক সময়ে একটি বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক ব্যবহারের পরিমাণকে বিক্রিয়ার হার বলে।
খ. যে সকল বস্তু কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাদেরকে বিক্রিয়ক বলা হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থসমূহ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থে পরিনত হয়। এবং যে বস্তু কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কের সংস্পর্শে থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি বা হ্রাস করে, কিন্তু বিক্রিয়ার শেষে ভরে এবং রাসায়নিক সংযুক্তিতে অপরিবর্তিত থাকে, তাকে ঐ বিক্রিয়ার প্রভাবক বলা হয়। যেহেতু, বিক্রিয়া শেষে বিক্রিয়কসমূহ যেভাবে রাসায়নিক সংযুক্তিতে পরিবর্তিত হয় প্রভাবকসমূহ সেইরকম পরিবর্তিত হয়না, সেহেতু প্রভাবকগুলোকে বিক্রিয়ক বলা যায়না।
গ. রহিম যদিও খেয়াল করল বিক্রিয়াটি একরকম বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু বিক্রিয়াটি আসলে সাম্যাবস্থায় আছে। লা শাতেলিয়ে নীতি অনুসারে, কোনো বিক্রিয়া সাম্যাবস্থায় থাকাকালে যদি ঐ অবস্থার একটি নিয়ামক, যেমন তাপমাত্রা, চাপ বা ঘনমাত্রা পরিবর্তন করা হয়, তবে সাম্যের অবস্থান এমনভাবে বদলাবে যেন নিয়ামক পরিবর্তনের ফলাফল প্রশমিত হয়।
প্রদত্ত বিক্রিয়াটির সমীকরণটি লিখলে নিম্নরূপ হয়ঃ
A2 + 3B2 = 2AB3
যেহেতু বিক্রিয়ক ও উৎপাদের প্রত্যেকে গ্যাসীয়, তাই এইক্ষেত্রে চাপের প্রভাব থাকতে পারে। বিক্রিয়াটিতে ১ মোল A2, ৩ মোল B2 এর সাথে বিক্রিয়া করে ২ মোল AB3 উৎপন্ন করে। অর্থাৎ বিক্রিয়কের মোট মোল সংখ্যা ৪, কিন্তু উৎপাদের মোল সংখ্যা ২ মোল। যেহেতু এইক্ষেত্রে বিক্রিয়কের মোলসংখ্যা থেকে উৎপাদের মোল সংখ্যা কম, সেহেতু এখানে বিক্রিয়ার পর চাপ কমে। তাই বিক্রিয়াটির বর্তমান অবস্থায় যদি চাপ বাড়ানো হয়,তবে এই বর্ধিত চাপের ফলাফল প্রশমিত করার জন্য লা শাতেলিয়ে নীতি অনুসারে বিক্রিয়াটি সামনের দিকে এগোবে। আর যদি চাপ কমানো হয় তবে বিক্রিয়াটি পিছন দিকে যাবে।
ঘ. এখানে, A2 অণুতে দুইটি A পরমাণুর মধ্যে বন্ধন শক্তি 945 kJmole-1। তাহলে ১ মোল A2 অণুর বন্ধন ভাঙতে 945 kJ শক্তি শোষিত হয়।
একই ভাবে B2 অণুতে দুইটি B পরমাণুর মধ্যে বন্ধন শক্তি 435 kJmole-1। তাহলে ৩ মোল B2 অণুর বন্ধন ভাঙতে শক্তি শোষিত হয় = (435 kJ X 3) = 1305 kJ ।
তাই প্রদত্ত ক্ষেত্রে বিক্রিয়কগুলোর বন্ধনসমূহ ভাঙতে সর্বমোট শক্তির প্রয়োজন = 945 kJ + 1305 kJ = 2250 kJ।
আবার, একটি A ও B পরমাণুর মধ্যে বন্ধনশক্তি 391 kJmole-1। যেহেতু এক অণু AB3 তে তিনটি A ও B এর মধ্যে বন্ধন আছে। তাই ১ মোল AB3 গড়তে শক্তি নির্গত হবে = (391 kJ X 3) = 1173 kJ। তাহলে ২ মোল AB3 গড়তে শক্তি নির্গত হবে = (1173 kJ X 2) = 2346 kJ।
যেহেতু এইক্ষেত্রে বন্ধন ভাঙার প্রয়োজনীয় শক্তি (2250 kJ) নতুন বন্ধন সৃষ্টিতে নির্গত শক্তি (2346 kJ) থেকে কম, তাই বিক্রিয়াটি তাপোৎপাদী। অর্থাৎ বিক্রিয়াটি সামনের দিকে অগ্রসর হলে তাপের উদ্ভব ঘটে এবং পিছনের দিকে অগ্রসর হলে তাপের হ্রাস ঘটে।
আমরা জানি, সাধারণত তাপমাত্রা বাড়ালে বিক্রিয়ার সম্মুখ গতি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রদত্ত ক্ষেত্রে বিক্রিয়াটি সাম্যাবস্থায় আছে।
এইক্ষেত্রে তাপ প্রয়োগে বিক্রিয়ার গতি লা শাতেলিয়ে নীতি অনুসারে নির্ধারিত হবে। রহিম যদি এইক্ষেত্রে তাপ দেয় তবে এই বর্ধিত তাপের ফলাফল প্রশমিত করার জন্য লা শাতেলিয়ে নীতি অনুসারে বিক্রিয়াটি রহিমের ইচ্ছেমতো সামনের দিকে না এগিয়ে পিছনের দিকে যাবে।
নিচের ডায়াগ্রামটি লক্ষ করো ও প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ক. কোন যৌগগুলোকে প্যারাফিন বলা হয়?
খ. জৈব যৌগের প্রাচুর্যের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. প্রদত্ত ডায়াগ্রামটির A যৌগটি কী, নির্ণয় করো।
ঘ. প্রদত্ত ক্ষেত্রে CH3-CH2-CH2-I থেকে C যৌগটি পাওয়ার যে দুইটি উপায় দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে উভয় ক্ষেত্রে NaOH যোগ করা সত্ত্বেও একটি ক্ষেত্রে একটি ধাপ বেশি লেগেছে কেন, বিশ্লেষণ করো।
মতামত জানাতে এখানে ক্লিক করো।